ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

রিমান্ডে নিয়ে নারীকে নির্যাতনে অভিযোগ

তুষার তুহিন ।।
জীবন আরা নামের এক নারীকে কক্সবাজার সদর থানায় নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানির করেছে এস আই মানস বড়ুয়া। ১৩ মার্চ রাতে রিমান্ডের নামে সদর থানায় নিয়ে গিয়ে ওই নারীর উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। জীবন আরার ব্যবসায়ীক প্রতিপক্ষ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এস আই মানস বড়–য়া শরীরের বিভিন্নস্থানে বৈদ্যুতিক শক দিয়েছে বলে দাবী করেছেন ওই নির্যাতিতা নারী। এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার সহ পুলিশ সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। পাশাপাশি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকেও লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করেছেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২ মার্চ জীবন আরা ও তার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় আটক করে। তার ব্যবসায়ীক প্রতিপক্ষ ঢাকার পশ্চিম উত্তরার কামালপাড়ার সিরাজুল হকের স্ত্রী সীমা আক্তারের কাছ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে সেদিন তাদের দুজনকে ইয়াবাসহ আটক দেখায় পুলিশ। এরপর তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়। জেল হাজতে পাঠানোর দশদিন পর তাকে রিমান্ডে আনা হয়। রিমান্ডের দিন এসআই মানস তার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবী করে। সেই টাকা তিনি দিতে অস্বীকার করলে এসআই মানস তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।
এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত জীবন আরা জানান, এস আই মানসের নির্যাতনের বর্ণনা দেওয়ার ভাষা তার জানা নেই। পুলিশ যে কতটা পাষন্ড ও বর্বর হতে পারে তার উদাহারন মানস। তিনি এখনো মানসের নির্যাতনের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন।
নির্যাতিত নারী জানান, আটকের দিন পুলিশ তার বাসা থেকে ব্যাংক চেক, স্বর্নালংকার ও একটি প্রাইভেট কার নিয়ে আসে। বর্তমানে সেসব জিনিসের হদিসও তার জানা নেই।
তিনি আরো জানান, কারাগার থেকে বের হয়ে নির্যাতনের বিরুদ্ধে সঠিক বিচার পেতে সহায়তার জন্য তিনি ঝাউতলা নারী কল্যান সমিতিতে যান। সেখান থেকে কথা বলে ফেরার পথে পুলিশ আবারও তার উপর হামলা করে। ওই সময় নুনিয়ারছড়া এলাকায় ইট দিয়ে পিটিয়ে তার দেবরের পা ভেঙ্গে দেয় এসআই মানস।
এদিকে ঝাউতলা নারী কল্যান সমিতির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ফাতেমা আনকিজ ডেজী জানান, নির্যাতিত নারীকে নিয়ে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন। এছাড়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদে চৌধুরীর সহযোগীতায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ওই নারী শরীরের সর্বত্র ক্ষতের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন। তাই তার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে নারী কল্যান সমিতি প্রয়োজনে রাস্তায় নামবে।
কক্সবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী জানান, এক নারী এসআই মানসের হাতে নির্যাতিত হয়েছে বলে জেলা পরিষদে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। তার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি কাজ করছেন।
এদিকে অভিযুক্ত এস আই মানস বড়–য়া জানান, অভিযোগকারী নারী জীবন আরা সদর থানার একটি নিয়মিত মামলার আসামী। সেই হিসেবে ১৩ মার্চ তাকে এক দিনের রিমান্ডে আনা হয়। কিন্তু সেখানে তাকে কোন নির্যাতন করা হয়নি। তবে জীবন আরা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরাজুল হক টুটুল জানান, এসআই মানসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন। সমস্ত প্রমানাদি নিয়ে ২১ এপ্রিল পুলিশ সুপার ক্যার্যালয়ে দেখা করার জন্য নির্যাতিত ওই নারীকে বলা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, যদি ওই নারীর দায়ের করা অভিযোগ সত্য হয়ে থাকে তবে বিষয়টি ন্যাক্কারজনক। নির্যাতিত নারী যদি তাকে নির্যাতনের কোন প্রমান দিতে পারেন তবে এসআই মানসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: